Sometimes it is the people no one can imagine anything of who do the things no one can imagine.
Alan Turing
এআই ক্ষেত্রটিতে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যাক্তিটির নাম অ্যালান টুরিং (১৯১১-১৯৫৪)। তিনি ছিলেন বিখ্যাত ব্রিটিশ গণিতবিদ। দূরদর্শী টুরিং এআই সংক্রান্ত গবেষণার ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। টুরিং-এর অবদানের প্রভাব ঐতিহাসিকভাবে ছিল অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি নাৎসিদের গোপন যোগাযোগের ব্যাখ্যা করে মিত্রবাহিনীকে সাহায্য করেছিলেন। এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে, তিনি একটি ধারণা চালু করেছিলেন যা কম্পিউটারকে আজকের শক্তিশালী এবং বহুমুখী মেশিনে রূপান্তরিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
টুরিং একাই পুরো কম্পিউটার বিপ্লবের বুনিয়াদ গড়ে তোলেন। তিনি এমন এক যন্ত্রের কথা কল্পনা করেছিলেন (একে বলে টুরিং মেশিন), যেখানে মাত্র তিনটি উপাদান থাকবে। সেগুলো হলো: একটি ইনপুট টেপ, একটি আউটপুট টেপ আর একটি সেন্ট্রাল প্রসেসর ইউনিট (যেমন: পেন্টিয়াম চিপ)। এ উপাদানগুলো সুনির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করতে পারবে। এখান থেকে তিনি কম্পিউটিং মেশিনের সূত্রগুলো বিধিবদ্ধ করতে সক্ষম হন। আবার সুনির্দিষ্টভাবে তাদের চূড়ান্ত শক্তি এবং সীমাবদ্ধতাও নির্ধারণ করেন তিনি। বর্তমানে সব ডিজিটাল কম্পিউটার টুরিং-এর নির্ভুল এ সূত্রগুলো মেনে চলে। এ কারণেই টুরিং-এর কাছে গোটা ডিজিটাল জগতের অনেক ঋণ।
গাণিতিক যুক্তিবিদ্যার ভিত্তি স্থাপনে টুরিং-এর অবদান অনেক। টুরিং প্রমাণ দেখান যে, নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করতে একটি টুরিং মেশিন অসীম সময় নিল কিনা, সাধারণভাবে তা জানা অসম্ভব। এটি প্রমাণ করে তিনি কম্পিউটার বিপ্লবের সাথে যুক্ত হয়ে যান। কিন্তু কম্পিউটার যদি কিছু গণনা করতে অসীম সময় লাগায়, তাহলে সেটির অর্থ হলো, কম্পিউটারকে যা গণনা করতে দেয়া হয়েছিল তা গ্রহণযোগ্য নয়। কাজেই টুরিং প্রমাণ করেন যে, গণিতে এমনও সত্যি বিবৃতি আছে, যা অগণনাযোগ্য। অর্থাৎ কম্পিউটার যত শক্তিশালীই হোক না কেন, ওই গণনা কম্পিউটারের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, কোড ভাঙার ক্ষেত্রে টুরিং-এর পথপ্রদর্শনমূলক কাজের জন্য মিত্রবাহিনীর হাজার হাজার প্রাণ মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যায়, যুদ্ধের ফলাফলেও তা প্রভাব ফেলে। সে সময় হিটলারের নাৎসি বাহিনী এনিগমা নামক এক যন্ত্র ব্যবহার করে তথ্য সংকেতাবদ্ধ করত। সে কারণে সেগুলো ডিকোড করা অসম্ভব হয়ে ওঠে মিত্রবাহিনীর কাছে। তাই নাৎসি বাহিনীর কোডগুলো ভাঙতে পারবে, এমন যন্ত্র বানানোর নির্দেশ দেওয়া হয় টুরিং এবং তার সহকর্মীদের। টুরিং-এর মেশিনের নাম ছিল বোম্বি। সেটি শেষ পর্যন্ত সফল হয়। যুদ্ধ শেষ হওয়ার সময় তার দুই শতাধিক যন্ত্র কাজ করে যাচ্ছিলো। এসব যন্ত্র ব্যবহার করে নাৎসি বাহিনীর গোপন তথ্য পড়তে পেরেছিল মিত্রবাহিনী। জার্মানিতে চূড়ান্ত আক্রমণের তারিখ ও স্থান সম্পর্কে নাৎসিদের বোকা বানাতেও পেরেছিলো তারা। এরপর থেকেই নরমান্ডি আক্রমণের পরিকল্পনায় টুরিং-এর কাজ কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা নিয়ে বিতর্কে নামেন ইতিহাসবিদেরা। কারণ, এ আক্রমণেই মূলত পরাজিত হয় জার্মানরা। যুদ্ধের পর টুরিং-এর কাজ গোপন রাখে ব্রিটিশ সরকার। তাতে তার গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো অনেক দিন জনসাধারণের চোখের আড়ালে থেকে যায়।
দ্বিতীয় বিশযুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার পেছনে সহায়তা করেন অ্যালান টুরিং। কিন্তু বিশ্বযুদ্ধের সময় নায়কে পরিণত হওয়ার বদলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। একদিন তার বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটল। দ্রুত পুলিশকে খবর দেন তিনি। দুর্ভাগ্যক্রমে সেখানে তার সমকামিতার প্রমাণ পায় পুলিশ। তাকে সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর টুরিং-এর দেহে যৌন হরমোন ঢুকিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। এর প্রভাবটি ছিল মারাত্মক। এর ফলে তার স্তন বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং প্রচন্ড মানসিক যন্ত্রণার কবলে পড়েন তিনি। এসব সহ্য করতে না পেরে তিনি ১৯৫৪ সালে সায়ানাইড মেশানো একটি আপেল খেয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। একথা সকলেই জানে যে, আপেল গাছ হতে নিউটনের মাথার উপর আপেল পড়ার ঘটনা হতে বিখ্যাত অ্যাপল কর্পোরেশনের লোগো রাখার ধারণা পান রোনাল্ড ওয়েন। কিন্তু প্রচলিত এক গুজব মতে, টুরিং-এর প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতেই অ্যাপল কর্পোরেশনের লোগো রাখা হয়েছে “কামড়ে খাওয়া” একটি আপেল।
২০১৪ সালের ১৯ আগস্ট ইংল্যান্ডের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ অবশেষে সমকামী আচরণের জন্য ১৯৫২ সালে দণ্ডিত অ্যালান টুরিংকে মরণোত্তর ক্ষমা প্রদান করেন। এভাবেই বিংশ শতাব্দীর অন্যতম অসামান্য বৈজ্ঞানিক ব্যক্তিত্বের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষ করে। ব্রিটিশ সরকার।
বর্তমানে “টুরিং টেস্ট”-এর কারণে সম্ভবত টুরিং বেশি পরিচিত। যন্ত্র চিন্তা করতে পারে কি না ও তাদের আত্মা আছে কিনা, এ ধরণের অর্থহীন, অবিরাম দার্শনিক আলোচনায় ক্লান্ত হতেন তিনি। সে জন্য একটি পরীক্ষা উদ্ভাবনের মাধ্যমে তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে কঠিন এবং যথাযথ আলোচনা শুরু করার চেষ্টা করেন। তাঁর প্রস্তাব ছিল, দুটি সিল করা বাক্সের একটিতে একজন মানুষ এবং অন্যটিতে একটি যন্ত্র রাখা হলো। প্রতিটি বাক্সে তোমাদেরকে প্রশ্ন করার সুযোগ দেয়া হলো। সেখান থেকে পাওয়া উত্তর থেকে যদি তোমরা মানুষ ও যন্ত্রের মধ্যে কোনো পার্থক্য করতে না পারো, তাহলে যন্ত্রটি টুরিং টেস্ট পাশ করবে।
সহজ কিছু কম্পিউটার প্রোগ্রাম লিখেছেন কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা। যেমন: এলিজা। এটি মানুষের কথোপকথন নকল করতে পারে। তাতে অধিকাংশ সরল মানুষ বিশ্বাস করে বসে যে তারা মানুষের সাথে কথা বলছে। (বেশিরভাগ মানুষের কথাবার্তায় কয়েক শ শব্দ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তারা কেবল গুটিকয়েক শব্দের ওপর মনোযোগ দিতে পারে।) তবে সকল মানুষকে ধোঁকা দিতে পারে এমন কম্পিউটার প্রোগ্রাম আজ পর্যন্ত লেখা হয়নি। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সকল প্রোগ্রামেই কিছু না কিছু বাগ থেকে যায়। বিশেষ করে কোন বক্সে মানুষ আর কোন বক্সে যন্ত্র আছে, এটি নির্ণয় করাকে যারা চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে, তাদের ধোঁকা দেওয়া যায় না। (স্বয়ং টুরিং অনুমান করেন যে, কম্পিউটার ক্ষমতার ক্রমাগত সূচকীয় বৃদ্ধির পরে একুশ শতকে এমন যন্ত্রও বানানো সম্ভব হতে পারে, যেটি মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে ৩০ শতাংশ বিচারককে বোকা বানাতে পারবে।)
If you like this article, please share it with your friends and follow our community on social platforms to get notified about our latest activities, events, and articles.
An article by The AS8 Organization
Credits:
- Research, Content Writing & Cover Image - Ahammad Shawki
- Editing - Arko Chowdhury